সময় বার্তা ৭১ ডট কমঃ-
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ৪৫ জন প্রার্থী।সোমবার (৪ ডিসেম্বর) জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসকল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর ৩৮ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর বাদ পড়েছেন ৭ জন প্রার্থী।
তবে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের কোনো আসনেই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির মতো হেভিওয়েট কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়নি। হেভিওয়েট প্রার্থীদের হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে তিনটি আসনেই (রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, সোনারগাঁ)। অন্য দুটি আসনে ওসমান ভাতৃদ্বয়ের (শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান) তাদের বিপক্ষে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বললেই চলে।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে শুরু থেকেই। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিপক্ষে মাঠে রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়া।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আলমগীর সিকদার লোটন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৩ (সেনারগাঁ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন টানা দুইবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় পাওয়া গেছে তাদের দেওয়া বিভিন্ন সম্পদের তথ্য। প্রাপ্ত তথ্যসমূহ বিশ্লেষণ করে হেভিওয়েট প্রার্থীদের সম্পদের পরিমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
নারায়ণগঞ্জ-১
গোলাম দস্তগীর গাজী- হলফনামায় বাড়ি ও অন্যান্য ভাড়া থেকে বাৎসরিক আয় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ৮২ কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার ৬০০টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত আছে ৯১ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৫ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা বাৎসরিক ৩২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৮ টাকা। তার কাছে নগদ টাকা আছে ৯ কোটি ৬২লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা আছে ৬১ লাখ ৪৩ হাজার ১২৯ টাকা। পরিবহন খাতে তার সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৯৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৭ টাকা। তার অন্যান্য সম্পত্তির পরিমাণ ১৩০৪ কোটি ৩১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৭২ হাজার টাকা বলে তিনি তার হলফনামায় উল্লেখ করেন। এছাড়া তার নামে জমি রয়েছে ৭৮ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৪৭ টাকা মূল্যের। তার নামে দালানকোঠা রয়েছে ২৮ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ১৯১ টাকা মূল্যের। তার নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের পরিমাণ ৯৩৫ কোটি ৩২ লাখ ৫ হাজার ২০৭ টাকা।
তৈমুর আলম খন্দকার– বাড়ি এপার্টম্যান্টের ভাড়া থেকে তার বাৎসরিক আয় ৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৩৯ টাকা। শেয়ার/সঞ্চয়পত্রের মূল্য ৪৬ হাজার ৪০৯ টাকা। পেশাগত বা কাজ করে তার উপার্জন ৪ লাখ টাকা। তার নিকট নগদ অর্থ রয়েছে ৬ লাখ ৫১ হাজার ৫০২ টাকা। ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৮ টাকা। রাজউক প্লটে রয়েছে তার ৫ কাঠা জমি। এছাড়া তার রয়েছে একটি বাড়ি।
শাহজাহান ভূঁইয়া– হলফনামা অনুযায়ী বাড়ি/দোকান ভাড়া থেকে বছরে তার আয় ১২ লাখ ২৪ হাজার ৬২৮ টাকা। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ২৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। শেয়ার/সঞ্চয়পত্র থেকে বছরে তার আয় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অন্যান্য সম্পদের পরিমাণ ৭০ হাজার টাকা। আবাসিক/বানিজ্যিক দালানের অর্জনকালীন সময়ে অর্থিক মূল্য ১ কোটি ৯৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৩০ টাকা। বাড়ি অ্যাপার্টমেন্ট ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ব্যাংকের কাছে তার ঋণের পরিমাণ ৭ লাখ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-২
নজরুল ইসলাম বাবুর- হলফনামা অনুযায়ী তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এম.এস.এস কৃষিখাতে তার আয় ১২,০০০ টাকা, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ব্যাংক আমানত ৩ লক্ষ ৩১ হাজার ১১৯ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা ৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। করমুক্ত সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা ১৬ লক্ষ ৪০ হাজার ৫ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি: নগদ টাকা ৬ লক্ষ ২২ হাজার ১৩৫ টাকা। ব্যাংক জমা ২ লক্ষ ৭ হাজার ৪৯ টাকা। শেয়ার ক্রয় ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৩৯৫ টাকা। স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ (সঞ্চয়পত্র ৫ বছর মেয়াদী) ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। গাড়ি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার স্টেশন ওয়াগন জিপ একটি যার মূল্য ১ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্বর্ণ ৩৫ ভরি এবং ৩২ বোর পিস্তল ও ১২ বোর শর্টগান যার মূল্য ৬ লাখ ১২ হাজার ১৮৬ টাকা। ইলেক্টনিক সামগ্রী ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আসবাবপত্র ৪ লাখ ১১ হাজার টাকা। সূচনা ডাইং এন্ড প্রিন্টিং লিমিটেড ১২,৫০০ শেয়ার যার মূল্য ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং গ্রিন ল্যান্ড টাউন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড ১৩ হাজার শেয়ার ১৩ লাখ টাকা স্থাবর সম্পত্তি কৃষি জমি ৩৩.১৩ শতাংশ। অকৃষি জমি ৩৬১.৭৯৫ শতাংশ যার মূল্য ২ কোটি ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। দালান ২.২৫ শতাংশ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। বাড়ি ৩২৩৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট যার মূল্য ৮১ লাখ টাকা। প্লট ১০ কাটা ৪ ছটাক যার মূল্য ৪১ লাখ।
আলমগীর শিকদার লোটনের হলফনামায় তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ৬০০ হাজার টাকা। শেয়ার/সঞ্চয়পত্র থেকে তার আয় ১৬ হাজার ৯১৫ টাকা। তার নগদ টাকার পরিমাণ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার ৯১৫ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-৩
আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত- তার বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান থেকে বাৎসরিক আয় ৩৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয় বা ব্যাংকে আমানত হিসেবে রয়েছে ৫৮ হাজার ৭৪৫ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে দু’টি মটর যান যার মূল্য ৮১ লক্ষ ৭১ হাজার ৭ টাকা, স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু নির্মিত অলঙ্কারাদি রয়েছে ২০ তোলা, যার মূল্য ৫২ হাজার টাকা, আসবাবপত্র রয়েছে ৩২ হাজার ৯০০ টাকা। তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ১৭৬ শতাংশ কৃষি জমি ও ৮৯.১০ শতাংশ অকৃষি জমি। এছাড়াও রয়েছে ১০.৮৩ শতাংশের জমিতে ৭ তলা দালান যার অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ২০,০০,০০০ টাকা। সেই সাথে তার রয়েছে পূর্বাচলে ১১ কাঠা ৪ ছটাক ৪ বর্গফুটের প্লট যার মূল্য ৪৬ লক্ষ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা।
লিয়াকত হোসেন খোকা- হলফনামা অনুযায়ী তার পেশা ব্যবসা। তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে কালীরবাজার চারারগোপে যাবতীয় কাঁচা পাকা ফলের আড়ত ও মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় লাবিবা ট্রেড লিংক আইউব প্লাজা, লাবিবা ট্রেড লিমিটেড, ইশা খাঁ এগ্রো লিমিটেড। তার ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ৯ লাখ ৪১ হাজার ৭১১ টাকা। ব্যাংকে সুদ ও শেয়ার থেকে তিনি আয় করেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া ৪ লাখ ৯২ হাজার ৪৭৯ টাকা।
এছাড়া জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তার বাৎসরিক আয় ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা। তার নিকট নগদ অর্থ রয়েছে ৩৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৯৭১ টাকা ও ব্যবসা বহির্ভূত সম্পত্তি ৩২ লক্ষ ৪০ হাজার ৯৯২ টাকা। তার নামে ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ রয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৬ টাকা। তার নামে শেয়ার রয়েছে ১৭ লাখ টাকার। লিয়াকত হোসেন খোকার নিজের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। স্বর্ণালংকার তার নিকট উপহার হিসেবে রয়েছে ৩০ ভরি। লিয়াকত হোসেন খোকার সৈয়দপুরে ৮ শতাংশ জমি রয়েছে যার মূল্য ২০ লাখ টাকা। তার নিজস্ব কোন বাড়ি নেই তবে তার স্ত্রীর শেয়ারে একটি তিন তলা বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে যার মূল্য ২০ লাখ ৭২ হাজার ৬৭৯ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-৪
শামীম ওসমান- হলফনামায় তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তার ৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেড এন কর্পোরেশন, জেড এন শিপিং লাইনস লিমিটেড, মাইশা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লি. ও উইসডম নিটিং মিলস্ লি.। নিজের বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য খাত থেকে বাৎসরিক আয় করেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯২ টাকা। শেয়ারের সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে জামানত সুদ থেকে তার বাৎসরিক আয় ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪১ টাকা। জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী পান ২২ লাখ ২ হাজার টাকা। তার নিজ নামে নগদ অর্থ রয়েছে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯২ টাকা। তার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৬৮৯ টাকা। তার কাছে থাকা লাইসেন্সকৃত রাইফেলের মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও পিস্তলের মুল্য ১ লাখ ৫ হাজার টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-৫
সেলিম ওসমান- হলফনামায় তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছেন যথা: উইজডম এ্যাটায়ার্স, উইজডম ফ্যাব্রিক্স, উইজডম নিটিং মিলস্, ফাইভ স্টার ফার্ম হাউজ লি. ও ফাইভ স্টার ফার্ম হাউজ। কৃষিখাত থেকে সেলিম ওসমানের বাৎসরিক আয় ৩১ লাখ ৬১ হাজার ২৯৮ টাকা। বাড়ি, দোকান ভাড়া ও অন্যান্য খাতে বাৎসরিক আয় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১০ টাকা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাৎসরিক আয় ৬০ লাখ, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্রে প্রাপ্ত সুদ থেকে আয় ৫১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৫ টাকা। এছাড়া জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা পান ২২ লাখ ২ হাজার টাকা।